প্রতিদিনই নামছে রাজধানীর বাতাসের মান। বাতাসের ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড (আদর্শ মান) অনুযায়ী ৬৫ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত ‘পিএম টু পয়েন্ট ফাইভ’ বা শ্বসনযোগ্য ধুলা থাকার কথা। শ্বাসনালী এমনকি রক্তে প্রবেশযোগ্য এই ধুলার পরিমাণ ক্ষেত্রভেদে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় আদর্শ মানের চেয়ে ৩ থেকে ১০ গুণ পর্যন্ত বেশি।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য।
ক্যাপসের একাধিক দল গত বছরের মার্চ, এপ্রিল, অক্টোবর ও ডিসেম্বরে রাজধানী ৭০টি স্থানে বায়ুর মান পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে। নীরব, আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্প এলাকাসহ ১২ ধরনের এলাকায় গবেষণা শেষে প্রায় সবগুলোতেই আদর্শ মানের চেয়ে তিন থেকে ১০ গুণ পর্যন্ত বেশি বায়ূদূষণ বেড়েছে বলে গবেষণায় উঠে আসে।
ক্যাপস ও স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘সাধারণ ইটভাটা, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বা নির্মাণ, গাড়ির কালো ধোঁয়া, রান্না থেকে উৎপন্ন ধোঁয়া, আবর্জনা পোড়ানো ও ট্রান্স বাউন্ডারি বা ক্রস বর্ডার বায়ুদূষণ এই ৬টি উৎস থেকে বায়ু দূষিত হয়। ২০২০ সালে এই দূষণের মাত্রা বেড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘৬৫ মাইক্রোগ্রাম টু পয়েন্ট ফাইভ তো আমাদের স্ট্যান্ডার্ড। করোনার বছর কোথাও ১৮০, ১৯০-এর কম পাইনি। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে বায়ূদূষণ বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ ভাগ। এই পিএম টু পয়েন্ট ফাইভ হলো পার্টিকুলেট ম্যাটার বা শ্বাসযোগ্য ধুলা। এগুলো এমন ধরনের পার্টিকেল যা আমরা শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করি। এই ধুলার ব্যাস ২ দশমিক ৫ মাইক্রোমিটার। এটা আমরা খালি চোখে দেখি না। একটা চুল কে কাঁচি দিয়ে কাটলে বা বল পয়েন্ট দিয়ে আঁকা ছোট বিন্দুর ২০ ভাগের ১ ভাগ।’
আহমদ কামরুজ্জামান আরও বলেন, ‘২০২০ সালে করোনার পূর্ববর্তী সময়, মাঝখানে কিছু সময় বিরতি দিয়ে ফের নভেম্বরে থেকে বর্তমান জানুয়ারি পর্যন্ত আমরা বায়ূদূষণে শীর্ষ অবস্থানে থাকছি। এর পেছনে কতগুলো প্রাকৃতিক কারণ রয়েছে আবার মানবসৃষ্ট কারণ আছে।’
এই গবেষক জানান, শুধুমাত্র মার্চ ও এপ্রিল দুই মাসে রাজধানীর বায়ুদূষণ এক-তৃতীয়াংশ কমেছিল। আবার জুন-জুলাই থেকে ফের তা বাড়তে শুরু করেছে।
এর কারণ হিসেবে তিনি আরও বলেন, ‘পিএম টেন জাতীয় ধুলা বা পার্টিকেল খালি চোখে দেখা যায়। কন্সট্রাকশন থেকে তৈরি হয় এই ধুলা। এগুলো সাধারণত নাকে, চুলে আটকে যায়। এগুলো রক্ত বা ফুসফুসে যায় না। কিন্তু এই পিএম টু পয়েন্ট ফাইভগুলো আসে কনভার্সন সোর্স থেকে। কোনো কিছু পোড়ানোর মাধ্যমে এই পার্টিকেল আসে। ঢাকায় এই শ্বসনযোগ্য পার্টিকেল বেশি। ইটের ভাটা, গাড়ির কালো ধোঁয়া থেকে এগুলো বেশি সৃষ্টি হয়। আবর্জনা পোড়ানো ধোঁয়াও টুপয়েন্ট ফাইভ।’
কনস্ট্রাকশন বা মেগা প্রজেক্ট যেমন- মেট্রোরেল বা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি এই টুপয়েন্ট ফাইভ পার্টিকেলের বড় উৎস বলে জানান তিনি।
প্রচুর পরিমাণ মেডিকেল বর্জ্য পোড়ানোর কারণে বায়ুদূষণ বাড়তে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রচুর পরিমাণ মাস্ক বা মেডিকেল ওয়েস্ট পোড়ানো হয়েছে হয়েছে করোনার সময়ে। অন্যান্য সোর্স বন্ধ থাকলেও ভয়ে অনেকেই এইগুলো পুড়িয়েছে। এটা বায়ুদূষণের বড় উৎস হতে পারে। এছাড়া মাতুয়াইল ও আমিনবাজার ডাম্পিং সাইটে প্রচুর বর্জ্য পোড়ানো হচ্ছে এখনও।’